রিজিক আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৃষ্টি করার পরে প্রত্যেককে তার নির্ধারিত রিজিক দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন কিন্তু সেক্ষেত্রেও অনেক সময় কিছু শর্ত বা কিছু আমল আল্লাহর দরবারে করতে হয় যাতে করে তিনি আমাদের সেই রিযিক এর মধ্যে বরকত দেন। রিজিক কাকে বলে….? আমরা অনেকেই মনে করি যে শুধুমাত্র খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ যে সমস্ত জিনিস খাওয়া যায় ঐ সকল জিনিস গুলোকেই রিযিক বলে। মূলত বিষয়টি এমন নয় রিজিক মানে শুধুমাত্র খাওয়া ও পান করাই নয়। রিজিক বলা হয় ধন-সম্পদ আর্থিক স্বচ্ছলতা ও আমাদের নিত্যদিনে জীবনের প্রয়োজনীয় যে সকল জিনিস রয়েছে সকল কিছুই রিজিকের সংজ্ঞার মধ্যে আসে।
তাই আমাদের মনে রাখতে হবে শুধু খাবার জাতীয় জিনিসকেই রিজিক বলা হয় না বরং আমাদের প্রয়োজনীয় সকল বস্তুই এক একটি রিজিক। তাই আমাদের সকল প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে চাওয়াটাই আমাদের সফলতা বয়ে নিয়ে আসে। রিজিকের ক্ষেত্রে ইস্তেগফার এর আমল একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। হাদিসের মধ্যে কোন কোন জায়গায় হাদিসের ভাষ্য এরকম এসেছে من لازم الاستغفار অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইস্তেগফারকে আঁকড়ে ধরবে এবং এটাকে নিয়মিত করবে। কখনো ছাড়বে না সবসময়ই তার মধ্যে ইস্তেগফার অব্যাহত থাকবে। ওই ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এমন এমন বিপদ হতে এমন কিছু দিয়ে সন্তুষ্ট করবেন যে ওই ব্যক্তি কখনো তা ভাবতেও পারেনি। এখন আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে যে—
ইস্তেগফার কিভাবে করব
আসলে ইস্তেগফার এমন একটি আমল যা ছাড়া আমাদের কোন উপায় নেই এবং সহজ কোনো পথ ও নেই। ইস্তেগফার আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত বিপদ আপদ বালা মুসিবত থেকে হেফাজত করবে। দুনিয়ার পেরেশানি বলতে আমাদের বিপদ আপদ বালা মুসিবত অভাব অনটন অসুস্থতা ব্যর্থতা ইত্যাদি থেকে আমাদেরকে মুক্ত রাখবে। আর আখেরাতের পেরেশানি পাপ গুনাহ জাহান্নাম কবরের আজাব কেয়ামতের ফায়সালা ইত্যাদি। এ সকল পেরেশানি থেকে আমাদেরকে মুক্ত রাখবে। পবিত্র কোরআনে কারীম এর মধ্যে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা নূহ এর মধ্যে হযরত নূহ আলাইহিস সালাম তার সম্পর্কে বলছেন فقلت استغفروا ربكم انه كان غفارا – يرسل السماء عليكم مدرارا ويمددكم باموال وبنين ويجعل لكم جنات ويجعل لكم انهارا তিনি বলেন আমি বলেছি আমার জাতিকে, তোমরা ইস্তেগফার করো আল্লাহর কাছে ইস্তেগফারটা করতে থাকো, তোমার শত পেরেশানি ইনকাম নেই ব্যবসা খারাপ সময়টা খারাপ যাচ্ছে যতই পেরেশানি থাক তুমি ইস্তেগফার কর, তাহলে তার পরিণাম হবে انه كان غفره যদি ইস্তেগফার করা হয় তাহলে প্রথম যে লাভটি হবে সেটি হল আল্লাহ তাআলা গুনাহ কে মাফ করে দিবেন। এরপর يرسل السماء عليكم مدرارا যাতে করে ফসল ভালো হয় রিজিক ভালো হয় সেই ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা করবেন। এরপর ويمددكم باموال وبنين ছেলে মেয়ে সন্তান নেই অথবা তারা নেক সন্তান নয় বাধ্য নয় তাহলে আল্লাহ তা’আলা নেক সন্তান দিয়ে তোমাকে শক্তিশালী করবেন, সম্পদ দিয়ে শক্তিশালী করবেন।
এরপর ويجعل لكم جنات ويجعل لكم انهارا আল্লাহ তাআলা পরশু বোন দিবেন, ফসল দিবেন, রিজিকে বরকত দিবেন, আর এসকল কিছু দিবেন استغفار (ইস্তেগফার) এর মাধ্যমে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের অবস্থা এতটাই ঈমানের দিক দিয়ে দুর্বল হয়ে গেছে যে আমরা প্রায় সকলেই এই ইস্তেগফার এর কথা জানার পরেও আমল করি না। অথচ আরবিরা এ বিষয়টি নিয়ে খুবই সেনসিটিভ তারা এটাকে পূর্ণভাবে আমল করার চেষ্টা করে। আসলে استغفر الله অর্থ কি..? এর অর্থ হলো আল্লাহর কাছে আমি ক্ষমা চাই, আল্লাহর কাছে আমি মাফ চাই, আল্লাহর কাছে আমি তাওবা করি। আমরা যদি একটু ভেবে দেখি তাহলে যে কোন বিষয়ে একটি কথা যখন কারো নিকটে বারবার বলি তখন সেটি অবশ্যই হয়ে যায় আর যখন স্বয়ং আল্লাহর কাছে আমরা বারবার বারবার ক্ষমা চাইবো তখন আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে ক্ষমা না করে কিভাবে থাকবেন। আমরা যখন কোন আমল করব বা কোন অবসর সময়ে পার করব বসে থেকে শুয়ে থেকে তখন এই আমলটা করার চেষ্টা করব যদিও বর্তমান সময়ে প্রায় কারোরই অবসর সময় থাকে না কারণ বর্তমান ডিজিটাল যুগে সকলের কাছে স্মার্টফোন স্মার্ট ডিভাইস থাকেই এ কারণে তারা ওই সকল কাজগুলোতে সময়গুলোকে ব্যয় করে এবং এগুলোতে এতই মগ্ন হয়ে যায় যে আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলো মানার কথা চিন্তাও করে না।
অথচ প্রতি নিয়তই আমাদের দুনিয়ার জীবনের সমাপ্তি ঘটছে প্রত্যেকটা সময় আমাদের জীবন থেকে দুনিয়ার যেই হায়াতটুকু আমাদের জন্য নির্ধারিত রয়েছে সেই সময় থেকে বিয়োগ হচ্ছে। আমরা একবার চিন্তাও করি না যে যে কোন সময় তো আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তার কাছে নিয়ে নিবেন তখন আল্লাহর কাছে আমি আপনি কি নিয়ে যাবো। তাই আমরা এখন যে রকম অবসর সময় পেলেই পাঁচ মিনিট দশ মিনিট সময় হাতে পেলেই যেমন স্মার্টফোনটা একটু ব্যবহার করি ঠিক তেমনি ভাবেই ইস্তেগফারের আমল টা যদি আমরা করতে পারি তাহলে দুনিয়া ও আখেরাতে আমরা প্রায় অনেকগুলো বিষয়ে সফলকাম হব। আমরা অনেকগুলো ইস্তেগফার এর কথা জানি এর মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হলো, সাইয়েদুল ইস্তেগফার পার্টি যদি আমরা মুখস্থ না পারি তাহলে অন্ততপক্ষে লিখিত টা দেখে পড়ার চেষ্টা করব।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার টি হল– اللهم انت ربي لا اله الا انت خلقتني وانا عبدك وانا على عهدك ووعدك ما استطعت اعوذ بك من شر ما صنعت ابوء لك بنعمتك علي وابوء بذنبي فاغفر لي فانه لا يغفر الذنوب الا انت
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি, ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু। আবু-উ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।
পারিভাষিক অর্থ: হে আল্লাহ আপনি আমার রব , আপনি আমার পালনকর্তা, আপনি ছাড়া আমার ইবাদত আমার উপাসনার উপযুক্ত আর কেউ নেই, আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, হে আল্লাহ আমি আপনার গোলাম, হে আল্লাহ আপনার সাথে যে অঙ্গীকার করেছিলাম الست بربكم আপনি আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমাদের রবকে আমরা উত্তরে বলেছিলাম بلا আপনি আমাদের রব, সেদিন যে স্বীকারোক্তি দিয়েছি আপনাকে রব হিসেবে স্বীকার করে আপনার আদেশ মানার যে অঙ্গীকার আমরা করেছি, যতটুকু পেরেছি আমরা আপনার সেই ওয়াদা রক্ষা করার চেষ্টা করেছি, হে আল্লাহ আমি স্বীকার করি আপনি আমার প্রতি অনেক নেয়ামত দিয়েছেন, হে আল্লাহ আমি এটাও স্বীকার করেছি যে অনেক অপরাধ অনেক পাপ আমার দ্বারা হয়ে গেছে, অতএব আপনি আমাকে মাফ করে দেন, কারণ আপনি ছাড়া আর কেউ আমার এ গুনাহ কে ক্ষমা করতে পারবে না।
তবে ইস্তেগফার করার সময় এ বিষয়গুলো যদি আমাদের মনের মধ্যে থাকে আমরা যদি একটু লক্ষ্য করি এবং আমল করার চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই আমরা সেটা করতে পারব। এখন কেউ এই ইস্তেগফার পারেনা বা এত বড় ইস্তেগফার সে পড়তে চায় না বা পারেই না তাহলেও কোন সমস্যা নাই ছোট ইস্তেগফারটা হলেও আমল করা যেমন استغفر الله (আস্তাগফিরুল্লাহ) হে আল্লাহ আপনার কাছে ক্ষমা চাই কত ভুল অন্যায় আমার দ্বারা হয়ে যায়। এটা ক্যামেরা রিমুভার বলতেও পারি রিমুভার যেভাবে কালিকে পরিষ্কার করে দেয় ঠিক তেমনিভাবে ইস্তেগফার আমাদের সকল গুনাহকে পরিষ্কার করে দেন আমাদেরকে গুনাহ মুক্ত করে দেন। তাই আমাদের যতই অগণিত ভুল হোক যত বড়ই ভুল হোক যত কঠিন বাধাই আমাদের দিকে আসুক না কেন এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে তার কাছে সাহায্য চাওয়া এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার করা তাহলে প্রত্যেকটা বিষয়ে আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সফল করবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমিন!