আমরা মানুষ সকলেই এক আল্লাহর এবাদত করি এবং আমাদের সকলের সৃষ্টিকর্তা রিজিকদাতা এক তিনি আমাদের সকল ভাল মন্দ বিষয়ে সঠিক জ্ঞান রাখেন কিন্তু আমরা মানুষ আমাদের দ্বারা ভুল হয়ে যায় অনেক সময় অনেক জিনিস যেটা আমাদের মনে হয় যে আমাদের জীবনে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল বা কোন একটি বিপদ যদিও সে বিষয়ে আল্লাহ ভালো জানেন সেটি আমার জন্য ভালো কি মন্দ তারপরেও আমরা যেহেতু গায়েবের খবর রাখি না তাই অনেক সময় আমাদের জীবনে ঘটে যাওয়া অনেক বিষয়কে আমরা বিপদ মনে করে থাকি তাই আজ একটি আমলের কথা সকলের জানার জন্য বলবো যে আমলটি করলে আমল কারী ব্যক্তির যে ক্ষতিটা হয়েছে বলে সে মনে করবে তার থেকেও অধিক বেশি কিছু অধিক ভালো কিছু দিয়ে আল্লাহ তাআলা তাকে সন্তুষ্ট করবেন।
যার প্রমাণ হযরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা যিনি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একজন স্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে স্বামী হিসেবে কিভাবে পেয়েছি সেটা কি তোমরা জানো..? তিনি বলেন আমার স্বামী আবু সালামা যখন মারা গেলেন আমি খুব বেশি ব্যথিত হলাম এবং আফসোস করলাম যে হায় আল্লাহ দুনিয়ার জমিনে একজন ভালো সঙ্গী হারালাম পৃথিবীতে সবথেকে কাছের যে মানুষ স্বামী তাকে হারালাম। তখন আল্লাহর কাছে আমি কেঁদে কেঁদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো এই দোয়াটি পড়তে লাগলাম। বুখারী শরীফ এর একটি হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন لن يعطي الطاع خيرا واوسع من الصبر সবরের চাইতে ধৈর্যের চাইতে আর কোন বড় সম্পদ সবচেয়ে বড় দান আল্লাহ তাআলা থেকে অধিক কল্যাণ আর কোন কিছু দেওয়া হয় নাই।
আল্লাহ তায়ালা যাকে এই জিনিসগুলো দিয়েছেন সে সবচেয়ে বেশি কল্যাণকামী হয়েছে, সে সব থেকে বেশি দামি সম্পদ পেয়েছে। যে আল্লাহ তা’আলা তাকে সবর এবং ধৈর্য নামক সম্পদ দিয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের মধ্যে বলেন ايكم منكم عشرون صابرون অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে ২০ জন যদি ধৈর্যশীল মানুষ থাকে তাহলে আল্লাহ তা’আলা বলেন يقلب مءتىن তারা দুইশত জনের সাথে লড়াই করে জিতে যাবে অর্থাৎ ২০ জন মানুষ যদি ধৈর্যশীল হয় তাহলে তারা ২০০ জন মানুষের সাথেও লড়াই করে যে তার সক্ষমতা রাখে। সত্য একটাই শুধু ধৈর্যশীল হওয়া লাগবে সবরকারী হওয়া লাগবে। এছাড়াও আমরা একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবো দুনিয়াতে যত নবী-রাসূল এসেছেন সকল নবী রাসূলকে আল্লাহতালা সবরের পরীক্ষা নিয়েছেন ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন এবং তারা সকলে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। পৃথিবীর একেবারে শুরু লগ্ন থেকে চিন্তা করে দেখলে হয়তো বুঝতে পারবেন হযরত আদম আলাইহিস সালাম যিনি পৃথিবীর সর্বপ্রথম মানব এবং আমাদের প্রথম নবী এবং আদি পিতা তিনিও সবর করেছেন। এরপরে হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম তিনি মহারাজা ছিলেন দুনিয়ায় সকল রাজাদের উপরে তিনি রাজত্ব করেছেন তার জীবনেও বড় পরীক্ষা এসেছে রাজত্ব কিছু সময়ের জন্য চলে গেছে আরো নানামুখী পরীক্ষা তার জীবনেও এসেছে কিন্তু তিনি সবর করেছেন।
এরপরে হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম তার জীবনেও পরীক্ষা এসেছে তিনি সবর করেছেন। হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম তার জীবনে মহাপরীক্ষায় এসেছে তিনিও সবর করেছেন। হযরত ইউনুস আলাইহিস সালাম তার জীবনে পরীক্ষা এসেছে এনাকে আল্লাহতালা মাছের পেটের মধ্যে নিয়ে গেছেন যে ঘটনা আমরা প্রায় সকলেই জানি তিনি সবর করেছেন আল্লাহ তাআলা তাকেও মুক্তি দিয়েছেন। এমন সময় হযরত মূসা আঃ তিনার জীবনেও এসেছে তিনিও সবর করেছেন। এছাড়াও আমাদের নবী পৃথিবীর সর্বশেষ নবী সর্বশ্রেষ্ঠ নবী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পুরো জীবনটাই একটা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে তিনি পুরা জীবনেই সবর করেছেন ধৈর্য ধরেছেন যা আমরা তার জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারি। প্রিয় নবী ইরশাদ করেছেন اشد الناس بلاء الانبياء ثم الامثال فالامثال আমাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে যারা দেখবেন ধৈর্য ধরতে পারে না অল্প কিছুতেই অস্থির হয়ে পড়ে পেরেশান হয়ে পড়ে এবং যা তা বলে ফেলে এভাবেও বলে যে আমার কপালটাই খারাপ আমি যেদিকে যাই সেদিকেই বিপদ হয়।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় মানুষকে আল্লাহ তাআলা কাকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন ان الله اذا احب قومني ابتلى আল্লাহ যখন কোন মানুষকে কোন সম্প্রদায়কে পছন্দ করেন তখন তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন। যদিও আল্লাহ তাআলা সবকিছু জানেন কারণ তিনি عالم الغيب গায়েবের খবর রাখেন। অতএব আমরা এটা মনে করা ভুল হবে যে আমাদের জীবনে বা আমার জীবনে শুধু বাধা আসে আল্লাহতালা আমাদেরকে বা আমাকে শুধু পরীক্ষা করেন বিষয়টি এমন নয় আল্লাহ তাআলা স্বয়ং নবীদেরকে যাদেরকে আমাদের শিক্ষার জন্য আমাদের জন্য আল্লাহ তরফ থেকেই পাঠিয়েছেন তাদেরকে পর্যন্ত আল্লাহতালা পরীক্ষা নিয়েছেন বিশেষ করে আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাক্কী জীবনী যদি আপনি পড়ে থাকেন তাহলে দেখবেন তার জীবনে পদে পদে বাধা লাঞ্ছনা তাকে কাফেররা পাথর মারতে মারতে রক্তাক্ত করে দিয়েছে এরপরে সাহাবী গণের জীবনে দেখেন সেখানেও তারা কত সবর করেছে কত ধৈর্য ধরেছে এরপরে আমাদের যেগুলো বড় ইমামগণ রয়েছেন তাদের জীবনে যদি দেখেন ইমাম আবু হানিফা থেকে শুরু করে ইমাম শাফি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল ইমাম মালেক সকলের জীবনে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের পরীক্ষা নিয়েছেন তাহলে আমি আপনি তো একদম অতি সাধারণ নগণ্য আমাদেরকে পরীক্ষা নেওয়াটা স্বাভাবিক হতেই পারে অতএব আমাদের যাদের ঐরকম চিন্তাধারা আছে তাদের চিন্তা গুলোকে পরিবর্তন করা দরকার।
আল্লাহ তাআলার প্রতি যদি বিশ্বাস থাকে তাহলে অবশ্যই সে বিশ্বাস করে যে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই আমার থেকে ভালো বোঝেন আমার জন্য কোনটা ভালো এবং কোনটা মন্দ সেটা আমার থেকে আমার প্রতিপালক আমার সৃষ্টিকর্তা তিনি বেশি ভালো জানেন আমি যা চেয়েছি তা হয়তো হয় নাই তাহলে আমি সেটা আল্লাহর উপরে ছেড়ে দিলাম আল্লাহ আমার জন্য যেটা ভালো মনে করেন সেটাই করেন আমি আল্লাহ তায়ালার ফায়সালার উপরে খুশি থাকব এমনটি ওই ব্যক্তি বলবে যার আল্লাহর প্রতি ঈমানের কোন দুর্বলতা নেই যদি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে আমাদের দুর্বলতা থাকে আমাদের ঈমানের মধ্যে যদি দুর্বলতা থাকে তাহলে এর বিপরীতটা আমরা ভাববো এটাই স্বাভাবিক। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যদি কোন মুসলমানের জীবনে কোন বিপদ আসে কোন মুসিবত আসে সঙ্গে সঙ্গে সে যদি انا لله وانا اليه راضيون (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) পরে এবং আরেকটি দোয়া পড়ে اللهم اجرني في مصيبتي اخلفني خيرا منها (আল্লাহুম্মা যূর্ণী ফি মুসিবাতি অখলুফনি খয়রম মিনহা) অর্থাৎ আল্লাহ আমার যে বিপদ হয়েছে এই বিপদের পরিবর্তে আপনি আমাকে সব দিয়ে দেন এবং বিপদে আমার যে ক্ষতি হলো আপনি এর চাইতে উত্তম কিছু দিয়ে আমাকে সন্তুষ্ট করে দেন।
এই দোয়া যদি কেউ পড়ে তাহলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উক্ত ব্যক্তির ওই বিপদে যা ক্ষতি হবে তার থেকে বেশি তার থেকে উত্তম কিছু দিয়ে অবশ্যই তাকে সন্তুষ্ট করে দিবেন। উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী তিনিও এই আমলটি করেছিলেন এই দোয়াটি পড়েছিলেন যার কারণে আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রমাণস্বরূপ তাকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত একজন মানুষ তাকে স্বামী হিসেবে দান করে উত্তম বদলা তাকে প্রদান করেছেন। অবশ্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সর্বশ্রেষ্ঠ নবী সর্বশ্রেষ্ঠ পিতা সর্বশ্রেষ্ঠ স্বামী সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা সকল ক্ষেত্রে তিনি তার শ্রেষ্ঠত্ব আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। অতএব যেকোন বিপদে ঈমানদার সর্বপ্রথম আল্লাহ তালাকে স্মরণ করবে এবং আল্লাহ তালাকে স্মরণের একটি পদ্ধতি আজ আমি বর্ণনা করেছি অবশ্যই আমরা চেষ্টা করব উক্ত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে একটু আমল করা যাতে করে আল্লাহ তাআলা আমাকে এবং আপনাকে উত্তম বদলা দান করেন।