একটি ইসলামিক শিক্ষনীয় ঘটনা বর্ণনা করার চেষ্টা করব আশা করি সকলের ভালো লাগবে ইনশাল্লাহ। বহু বছর আগে একজন প্রতাপশালী বাদশা ছিল যিনি তার জামানায় এখনকার বিশ্বনেতাদের মতো পরাশক্তি। যেমন নাকি ওই আসহাবে কাহাফ এর বাদশাহ, যেমন নাকি ওই নমরুদ ছিল, যেমন নাকি ওই ফেরাউন ছিল। এদের মত একজন প্রতাপশালী বাদশা ছিলেন। তার অধীনে একজন বড় জাদুকর ছিল। এই যাদু বিষয়টা যদিও আমরা এখন অতিরিক্ত গুরুত্ব দেই না তবে অতীতে এটি একটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। যদিও যাদুবিদ্যা এখনো আমাদের মধ্যে বিদ্যমান রয়েছে এবং একশ্রেণীর মানুষ এখনো এটির চর্চাও করেন। তবে সেটা জন সম্মুখে নয়। বর্তমান এইসব বিষয়গুলো অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে সম্পূর্ণ করা হয়। যদিও আমাদের সমাজে সাইন্স এগুলো বিশ্বাস করে না কিন্তু পবিত্র কোরআন যেহেতু বর্ণনা করেছে তাই কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক এটা সত্য অবশ্যই।
যেমনি ভাবে ফেরেশতা সত্য, জ্বীন সত্য, কবরের আজাব সত্য, আমাদের সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ তিনি সত্য, এ সকল জিনিস আমরা কেউই কখনো চোখে দেখি নাই তবুও এ সকল কিছুর উপর বিশ্বাস করা ও ঈমান আনা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। যদিও এসব বিষয়গুলোর ওপর যারা ঈমান আনে তাদেরকে বর্তমান সমাজে মৌলবাদী বলা হয়ে থাকে কারণ তারা এই রেফারেন্স দেয় যে যেটা দেখা যায় না তার ওপর কিভাবে বিশ্বাস স্থাপন করে এটার কোন ভিত্তি নেই যারা এইভাবে বলে থাকে। কিন্তু ইসলামিক দিক থেকে এটি একটি অনেক বড় একটি বিষয় কেননা এ সকল বিষয়গুলোর উপর যদি কেউ বিশ্বাস স্থাপন না করতে পারে তাহলে কি সে মুসলমান হতে পারে…? তার কি ঈমান থাকতে পারে..? আমাদের সমাজে যে সকল মানুষগুলো পরকাল কবরের আজাব এ সকল বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনা তাদেরকে বলছি আমরা কবরের আজাব সত্য পরকাল সত্য আমরা সেটা এখনই বিশ্বাস করি তোমরা যারা বিশ্বাস করো না তারা মৃত্যুর পরে তখন বিশ্বাস করো পার্থক্য শুধু এতোটুকুই হবে যে মৃত্যুর পূর্বে বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য আমাদের হাশর-নাসর এক রকম হবে এবং তোমরা মৃত্যুর পরে বিশ্বাস স্থাপন করার জন্য তোমাদের হাশর-নাসর অন্যরকম হবে।
বিশ্বাস বা ইয়াকিন কয়েক প্রকার হয়:- তার মধ্যে একটি হলো عين اليقين এবং আরেকটি হলো حق اليقين এগুলোর প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন অর্থ রয়েছে عين اليقين এর অর্থ হল চোখে দেখার নয় বিশ্বাস করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা সূরা আলিফ লাম মিম সিজদা এর মধ্যে বলেন رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ মহান আল্লাহ পাকের সামনে জাহান্নামিরা বলবে رَبَّنَا হে আমাদের রব أَبْصَرْنَا তোমার যে সকল আজাব আমরা দেখলাম وَسَمِعْنَا এবং যা শুনলাম فَارْجِعْنَا আমাদেরকে ফিরিয়ে দিন (এখানে ফিরিয়ে দেওয়া বলতে দুনিয়াতে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে) نَعْمَلْ صَالِحًا কেননা আমরা সৎ কাজ করব إِنَّا مُوقِنُونَ আমাদের একিন হয়ে গেছে। এর থেকে বোঝা যায় সকলেই একদিন বিশ্বাস করবে। তাহলে ঈসা ইবনে মারিয়াম তাকে যে সমাজের কিছু মানুষ বলে সে মারা গেছে কিন্তু ঈসা ইবনে মারিয়াম যখন নেমে আসবে পৃথিবীতে তখন সকলেই বিশ্বাস করবে সূরা মায়েদায় এজন্যই বলা হয়েছে যে হযরত ঈসা ইবনে মারিয়াম কে যখন পুনরায় পৃথিবীতে প্রেরণ করা হবে তখন একজন ও আহলে কিতাব বাকি থাকবে না যে তার প্রতি ঈমান আনবে না।
সত্য এটাই যে ঈসা ইবনে মারিয়াম মৃত্যুবরণ করেননি তাকে আল্লাহর কাছে উত্তোলন করে নেওয়া হয়েছে। যদিও আমাদের এই ছোট্ট মস্তিষ্কে এ বিষয়টি সঠিকভাবে ধারণ করতে পারি না আমরা কিন্তু একটি কথা যদি আমরা চিন্তা করি যে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাকে আপনাকে সহ পৃথিবীর সকল কিছুকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি আমাদের সকলকে রিজিক দেন, যিনি প্রত্যেকের দিকে সর্বদাই দৃষ্টিপাত করেন, যিনি চন্দ্র সূর্য গ্রহ নক্ষত্র সকল কিছুকেই পরিচালনা করেন, তার জন্য এটা কেমন বড় বিষয় যে তিনি কাউকে তার কাছে মৃত্যু ব্যতীত দেখে নেবে। আমরা যদি আরও একটু গভীরভাবে ভেবে দেখি তাহলে বুঝতে পারবো সকলের শরীরের মধ্যে যে রুহ থাকে সেটাকে আমরা কেউই দেখতে পাই না কিন্তু মহান আল্লাহর হুকুমে সেটি আমাদের হায়াত অনুযায়ী আমাদের কাছে থাকে এবং এরপর সেটি আল্লাহর দরবারে চলে যায় এটাতো তার কাছে কোনরূপ অসম্ভব বিষয় নয়।
আসলে তিনি তো মহাপরাক্রমশালী মহান খোদা তার জন্য কোন কিছুই অস্বাভাবিক নয় তার কাছে কোন কিছুই অসম্ভব নয়। যে বিষয়টি বলতে চাচ্ছি বহু বছর আগে একজন প্রতাপশালী বাদশার একজন জাদুকর ছিল সে জাদুকর যখন বৃদ্ধ হয়ে গেল তখন সে তার বাচ্চাকে বলল হে মোহন বাদশা আমার জীবন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে তাহলে আমার এই জ্ঞান বা এলেন আমি কিভাবে সংরক্ষণ করে রেখে যাব আমাকে একজন বিচক্ষণ ভালো আমার কাছে তালিমের জন্য প্রদান করুন তাহলে আমি আমার এ সকল এলেম তার কাছে সংরক্ষিত করে রেখে যাব বাদশাহর হুকুমে একজন বিচক্ষণ বালককে তার নিকট তালিমের জন্য প্রদান করা হলো এরপর জাদুকর তাকে জ্ঞান শিক্ষা দিতে লাগলো অর্থাৎ যাদুবিদ্যা শিক্ষা দিতে লাগলো এমত অবস্থায় ওই বালক যখন কৈশরে পদার্পণ করছিল তখন সে যাদুবিদ্যা শিখতে আসার সময় রাস্তায় এক পাদ্রির সাথে তার দেখা হয় (পাদ্রী অর্থ হল সেসময়ের ধর্মযাজক বা দরবেশ) এক সময় সে পাদ্রীর কাছে সে দেখা করতে লাগল এবং ওই পাদ্রী তাকে আসমানী কিতাব এর এলেম শিক্ষা দিতে লাগলো সেও এই এলেম শিক্ষা করে অত্যন্ত আনন্দিত।
কিন্তু যেহেতু বাদশা তাকে যাদুবিদ্যা শিক্ষার জন্য একজনের কাছে প্রেরণ করে তাই এখানে আসার কথা কেউ জানতে পারলে তার জন্য সেটা শাস্তি স্বরূপ হবে তাই তারা একটা কৌশল অবলম্বন করলো। কৌশলটি হল জাদুকরের কাছে যদি যেতে দেরি হয় তাহলে সে বলবে তার বাসস্থান থেকে আসতে দেরি হয়েছে এবং যদি বাসস্থানে যেতে দেরি হয় তাহলে সে বলবে জাদুকর এর নিকট হতে আসতে দেরি হয়েছে। এভাবে একটি কৌশল অবলম্বন করল যার দ্বারা সে মিথ্যা কথা বলল না এবং তাদের কাজ হাসিল হয়ে গেল। ওই বাল ক এইভাবে সকল দিকে সামঞ্জস্যতা রেখে উভয় দিকেই এলেম শিক্ষা করতে লাগলো। একটা সময় জাদুকর মৃত্যুবরণ করল। সে ভালো যেহেতু যাদুবিদ্যা শিক্ষার পাশাপাশি আল্লাহর দিনের এলেম শিক্ষা করছিল তাই সে আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ বিশ্বস্ত একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিণত হলো।
এমনিভাবে একদিন সে যখন বাদশাহর দরবারে যাচ্ছিল এমন সময় রাস্তায় একটি বিশাল জন্তু তার সামনে অধিষ্ঠিত হলো তখন সে বাল ক বললো আজ আমি প্রমাণ করে নিব আল্লাহ তায়ালার আনুগত্যশীল ওই পাদ্রি সঠিক না শয়তান পূজারী ওই জাদুকর সঠিক..? এরপর সে বালক একটি পাথর রাস্তা থেকে উত্তোলন করল এবং আল্লাহর কাছে এভাবে বলল যে হে আল্লাহ তোমার ইবাদত ও বড়ত্ব যদি ওই জাদুকরের থেকে বড় হয়ে থাকে মূল্যবান হয়ে থাকে তাহলে আমার এই পাথরের আঘাতে তুমি এই জন্তুটিকে মেরে ফেলো। এবং বিসমিল্লাহ বলে পাথরটি নিক্ষেপ করল এবং মুহুর্তের মধ্যে পাথরের আঘাতে জন্তুটি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। তখন তার কাছে তার عين اليقين পরিণত হলো حق اليقين এ, সে বুঝতে পারলো যে এক আল্লাহ সত্য এবং তিনি সকল ইবাদতের যোগ্য। bআল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে তার সকল ইবাদত সঠিকভাবে করার তাওফিক দিন এবং তার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে একজন পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন!